শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
দর্শনীয় পাঁচটি ডুবে যাওয়া জাহাজ

দর্শনীয় পাঁচটি ডুবে যাওয়া জাহাজ

আরফাতুন নাবিলা : সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মাণের পরও নানা কারণে পানিতে ডুবে গেছে বিশালাকার অনেক জাহাজ। ডুবে গেলেও এসব জাহাজ এখনো মানুষের আগ্রহের বস্তু। এমনই কিছু ডুবে যাওয়া জাহাজ নিয়ে আজকের প্রতিবেদন।

ইয়ানিস ডি

সর্বপ্রথম ১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাপানের ইমাবারিতে ‘শয়ো মারু’ নামে জাহাজটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৭৫ সালে বিক্রির পর এর নতুন নাম দেওয়া হয় ‘মার্কাস’। ১৯৮০ সালে এটি কিনে নেয় গ্রিসের পাইরেইয়াসের ডিউমার্ক শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং করপোরেশন। তখন এর নাম দেওয়া হয় ‘ইয়ানিস ডি’। জাহাজটি লম্বায় ৯৯ দশমিক ৫ মিটার, বিম ১৬ মিটার, ওজন ২ হাজার ৯৯২ টন। জাহাজটি পরিচালনা করা হতো ছয় সিলিন্ডারের ডিজেল ইঞ্জিনের সাহায্যে। এই ইঞ্জিনের জাপানি নির্মাণকারক প্রতিষ্ঠানের নাম আকাসাকা টেকোসো কেকে অব ইয়াইজিউ।

১৯৮৩ সালের এপ্রিল মাসে যুগোসস্নাভিয়ার রিজেকা থেকে সেগুন কাঠ (অনেকে অন্য কাঠের নামও বলে) নিয়ে ইয়ানিস ডি যাত্রা শুরু করে। কাঠের একটি অংশ জেদ্দায় এবং অপর অংশ ইয়েমেনের হুদাইদাতে পৌঁছানোর কথা ছিল। সময়মতো যাত্রা শুরু করলেও অ্যাড্রিয়াটিক সাগর, ভূমধ্যসাগর আর সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে যাত্রাপথ মোটেও সহজ ছিল না। যাত্রার কয়েক দিন পর ১৯ এপ্রিল জাহাজটি যখন রেড সিতে পৌঁছাল, তার আগে তাকে বেশ সরু একটি শিপিং লেন স্ট্রেট অব গিউবালের মাঝের পথ অতিক্রম করতে হয়।

বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে সমুদ্রের পানিতে আসার পর জাহাজের ক্যাপ্টেন ভেবেছিলেন কিছুটা সময় তিনি বিশ্রাম নেবেন। আর এ কারণেই জাহাজের হুইলটি জুনিয়র অফিসারের হাতে দিয়ে কেবিনে চলে এলেন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। সময় তখন ভোর ৪টা। ভয়ংকর একটি শব্দে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় জেগে উঠলেন ক্যাপ্টেন। ঘুম ভাঙতেই তিনি বুঝতে পারলেন ভীষণ বিপদে পড়তে যাচ্ছে ইয়ানিস ডি। নির্ধারিত যাত্রাপথ থেকে বেশি পশ্চিম দিকে চলে গিয়ে উত্তর-পূর্বদিকে থাকা শা’ব আবু নুহাস প্রবালপ্রাচীরের সঙ্গে অনেক জোরে ধাক্কা লাগে জাহাজটির। মুহূর্তেই ক্যাপ্টেন তার ক্রুদের জাহাজ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ১৫ মিনিট পর জাহাজটির আবার প্রবালপ্রাচীরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে এবং এটি তখনই পানির নিচে চলে যায়। এক বছর পর রেড সি’র পানিতে ডzবে থাকা অবস্থায় জাহাজটি মাঝ বরাবর ভেঙে যায়। এখনো ভেঙে যাওয়া এই জাহাজটি দেখতে অনেক পর্যটক আসেন।

মিস ওয়ার্ল্ড ডিসকভারার

সলোমন দ্বীপপুঞ্জের একটি ছোট অংশ নিগগেলা বা ফ্লোরিডা দ্বীপপুঞ্জ। এই নিগগেলা দ্বীপপুঞ্জের রোডারিক উপসাগরে পর্যটকদের জন্য খুব আকর্ষণীয় একটি জায়গা আছে। পর্যটকরা উপসাগরের এই রাস্তা ধরে যাবেন আর সুপরিচিত এই জায়গাটি এক নজর দেখবেন না এমনটি হয়নি। যদিও জায়গা বলার চেয়ে জিনিস বললেই বেশি বাস্তব শোনায়। জিনিসটি হচ্ছে ডzবন্ত একটি জাহাজ। ভাবছেন, জাহাজ যদি ডzবন্তই হয় তবে তা আবার দেখা যায় কী করে? আসল বিষয়টি এখানেই। জাহাজটি ডzবেই আছে তবে পুরোপুরি নয়। একটি অংশ পানির নিচে আর অপর অংশ পানির ওপরে ভাসমান অবস্থায় এ জাহাজটি এভাবেই আছে ২০০০ সাল থেকে।

এতক্ষণ যে জাহাজটি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, তার নাম ‘মিস ওয়ার্ল্ড ডিসকভারার’। জাহাজটি নির্মাণ করেছিল জার্মান শিপবিল্ডিং কোম্পানি শিকাউ আনটারউইজার। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস ব্রেমারহেভেনে। নানা ধরনের অভিযান পরিচালনার জন্য জাহাজের বিভিন্ন নাম ব্যবহার করা হতো। নির্মাণের দুই বছর পর এর নাম দেওয়া হয় ‘ওয়ার্ল্ড ডিসকভারার’। জাহাজটি নিয়ে বিস্তারিত আরও কিছু তথ্য দেওয়ার আগে আরও একটি বিষয়ের সঙ্গে পাঠককে ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি হচ্ছে ‘সোসাইটি এক্সপেডিশন’। এটি একটি কোম্পানির নাম। কোম্পানিটি আটটি জাহাজ নিয়ে বিশ্বজুড়ে অভিযান পরিচালনা করত। সেই জাহাজের মধ্যেই একটি ছিল ওয়ার্ল্ড ডিসকভারার। পরে নতুন মালিকের তত্ত্বাবধানে আসার পর এই প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে রাখা হয় ‘সোসাইটি এক্সপেডিশন ক্রুজেজ’। মালিক পরিবর্তন হলেও জার্মানির এই জাহাজের নাম আগেরটাই রেখে দেন তিনি। ওয়ার্ল্ড ডিসকভার বেশ সুগঠিত ও সুসজ্জিত ছিল অন্য অনেক জাহাজের চেয়ে। একটি পর্যবেক্ষণ কক্ষ, লাইব্রেরি, ছোট শরীরচর্চা কেন্দ্র, সুইমিং পুল, মেডিকেল সেন্টার আর লেকচার হল– এসবকিছুই ছিল ডিসকভারের অভ্যন্তরে। অ্যান্টার্কটিকা, চিলি, আর্জেন্টিনা, সাউথ প্যাসিফিক আইল্যান্ড, আলাস্কা, বেরিং সাগরের চারপাশে রাশিয়ান বর্ডার, ফকল্যান্ড আইল্যান্ডসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে বছরের পর বছর জাহাজটি ঘুরে বেড়িয়েছে। নর্থওয়েস্ট প্যাসেজের ৮১০০ মাইল পর্যন্ত ক্রুজিং করতে পারত ডিসকভারার।

সামুদ্রিক বিভিন্ন জায়গা, ভাসমান বরফের টুকরো, তাদের গতিপথ, জাহাজের গন্তব্যস্থল নিয়ে পর্যটকদের মনে উদ্ভাবিত হওয়া সব প্রশ্নের উত্তর দিতেন জাহাজের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন অলিভার ক্রুস ও তার সঙ্গে থাকা ছোট দল। জাহাজটি যখন বিভিন্ন তীরে ভিড়ত, তখন সেই জায়গাগুলোতেও ইতিহাসবিদ, ভূতাত্ত্বিক, জীববিজ্ঞানী এবং প্রকৃতিবিদদের নেতৃত্বে দু-একটি করে অভিযান পরিচালনা করা হতো। ওয়ার্ল্ড ডিসকভারার অনেক ভ্রমণপ্রিয়তার জন্য এক প্রকার ঘরই ছিল বলা যায়। জাহাজটি যেখানেই গেছে, এই মানুষগুলোও যেন নতুন নতুন তথ্য নিত্যদিন জানতে পেরেছে। ওয়ার্ল্ড ডিসকভারার তার স্বর্ণালি দিনের ইতি টানে ২০০০ সালের ৩০ এপ্রিল। এই দিন রোডারিক উপসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় একটি প্রবালপ্রাচীরে আটকে যায় জাহাজ। জাহাজটির কিছু অংশ ডzবে গেলেও নিরাপদে সবাইকে জাহাজের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে এত পছন্দের একটি জিনিসকে নিজ চোখের সামনে ডzবতে দেখে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলেন ওয়ার্ল্ড ডিসকভারারের ক্যাপ্টেন। কিন্তু তিনি ছিলেন নিরুপায়। সে সময় থেকে আজ অবধি ওয়ার্ল্ড ডিসকভারার একই জায়গায় আধা ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে।

দ্য আয়রন স্কো

ধারণা করে বলুন তো, একটি নৌকা যদি পানিতে ডzবে যায়, তবে সেটি কত দিন একই জায়গায় আটকে থাকতে পারে? যদি বলি একটি নৌকা একই জায়গায় আটকে ছিল পুরো ১০০ বছর, তবে সেটা কিছুটা অবিশ্বাস্য লাগবে না আপনার কাছে? অবিশ্বাস্য শোনালেও কথাটি সত্য। বজরা নৌকার মতো দেখতে একটি নৌকা আজ থেকে ১০১ বছর আগে অর্থাৎ ১৯১৮ সালে নায়াগ্রা ফলসের মাঝ বরাবর নদীতে ডুবে যায়। আর সেখানেই ১০০ বছর দিব্যি আটকে আছে সে। দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে সম্প্রতি (৩১ অক্টোবর) নৌকার কিছু অংশে জং ধরে সেখান থেকে টুকরো টুকরো অংশ খসে পড়ছে।

নৌকাটি বর্তমানে নায়াগ্রা ফলের ১৬০ ফুট কাছে অবস্থান করছে। প্রতিদিন অনেক মানুষ নায়াগ্রা ফলসের সৌন্দর্য দেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন এই নৌকাটিও দেখতে আসেন। ১৯১৮ সালের আগস্ট মাসে, গ্রেট লেকস ড্রেজ এবং ডকস কোম্পানির দুজন কর্মী গুস্তভ লফটবার্গ এবং ফ্র্যাংক হ্যারিস স্টিলের তৈরি এই নৌকাতে অবস্থান করছিলেন। নৌকাটি বাঁধা ছিল নায়াগ্রা নদীর আমেরিকার পাশে। তারা দুজনেই যে সময় নায়াগ্রা ফলস পাওয়ার কোম্পানির হাইড্রোলিক ক্যানেলে কাজ করছিলেন, ঠিক তখনই নৌকার দড়িটি ছিঁড়ে যায়। ৮০ ফুটের নৌকাটি মুহূর্তেই নায়াগ্রা ফলসের গভীর প্রপাতে হারিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই একটি বিশাল পাথরের সঙ্গে নৌকাটি আটকে গিয়ে বেঁচে যায়। মুহূর্তেই এ খবর ছড়িয়ে গেলে নায়াগ্রা ফলসের পাশে আমেরিকা এবং কানাডার একশোজনেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবকসহ আমেরিকান কোস্টগার্ড আসেন বিপদে পড়া মানুষদের সাহায্য করতে। উইলিয়াম রেড হিল নামের একজন কানাডিয়ান স্বেচ্ছাসেবক নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকার কাছে পৌঁছান।

১৩ ঘণ্টার অক্লান্ত চেষ্টার পর লফটবার্গ এবং হ্যারিসকে উদ্ধার করা হয়। রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবাই ধরে নিয়েছিলেন নৌকাটি পাথরটির কাছ থেকে সরে গিয়ে নৌকাসহ তারা সবাই ডzবে যাবে নায়াগ্রা ফলসের গভীর পানিতে। কিন্তু তাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে নৌকাটি একটুও নড়েনি। শুধু তাই নয়, নৌকাটি একই জায়গায় একইভাবে ছিল ১০০ বছর। এ ঘটনার পর নৌকাটির নাম দেওয়া হয় ‘দ্য আয়রন স্কো’ এবং ‘দ্য নায়াগ্রা স্কো’। নায়াগ্রা পার্ক ডিপার্টমেন্ট নৌকা নিয়ে লেখা বিভিন্ন ইতিহাসে এ ঘটনাকে জায়গা করে দেয়। ১০০ বছর একই জায়গা পার করে ১০১ বছরে এসে নৌকাটির কিছু জায়গায় ভাঙন ধরে এবং আগের জায়গা থেকে কিছুটা সরে আসে। নৌকাটি উদ্ধার করার পর সেটি নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা করা হবে। হয়তো তখন আরও অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবে বিশ্ববাসী।

এইচএমএস ভিক্সেন

এইচএমএস ভিক্সেন ছিল মূলত একটি রণতরী। আয়তনের দিক থেকে বিশে^ তৃতীয় হলেও এটি  ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান যুদ্ধজাহাজ। ভিক্সেনের মূল চালক ছিলেন দুজন। ভিক্সেনের নকশা করার সময় লক্ষ রাখা হয় আরও দুই সাঁজোয়া যান ভাইপার আর ওয়াটারউইচের নকশাকে। এই তিনটি যানই তৈরি করা হয়েছিল গবেষণার জন্য।

১৮৬৪ সালে ইংল্যান্ডে নির্মাণের তিন বছর পর এটিকে সমুদ্রে ভাসানো হয়। জাহাজের কাঠামো পুরোটাই সেগুন কাঠ দিয়ে বানানো ছিল। বর্তমানে নির্মিত নৌকাগুলোর ডেকেও একই কাঠ ব্যবহার করা হয়। সৌন্দর্যের জন্য সেগুন কাঠ ব্যবহার করা হলেও মূল সমস্যা হচ্ছিল চালনাতে। এই কারণে যুক্তরাজ্যের সমুদ্রবাহিনীতে ভিক্সেনকে সবচেয়ে ধীর গতির বলা হতো। এ ছাড়া পানি ওঠা-নামানোর জন্য পাম্প পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো বলে ভিক্সেন এবং ভাইপার উভয়কেই সমস্যায় পড়তে হয়। সামুদ্রিক অভিযানে এত ধীর জাহাজ দিয়ে কাজ করা সম্ভব নয় বলে ১৮৮৭ সালে দুটি জাহাজকেই সমুদ্রের কাজ থেকে বিরতি দেওয়া হয়। ১৮৮৮ সালে বারমুডায় কোস্ট ডিফেন্স জাহাজ হিসেবে এগুলো স্থানান্তরিত করা হয়। ১৮৯৫ সালের দিকে, ডকইয়ার্ডের শ্রমিকরা এটিকে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করত। ১৮৯৬ সালে, ভিক্সেনের সব ইঞ্জিন এবং মেশিন খুলে ফেলা হয়। পরে টর্পেডো আক্রমণ রোধ করার জন্য ডেনিয়েল উপসাগরের সরু চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয় ভিক্সেনের দ্বারা। এইচএমএস আজও পানির নিচে সেভাবেই অবস্থান করছে। ভিক্সেনকে সরাসরি দেখতে অনেকেই স্কুবা ডাইভিং করতে যান সেখানে। কিন্তু এ জন্য অবশ্যই অনুমতি নিতে হয়।

যুদ্ধজাহাজ ‘ভাসা’

ইউরোপে যখন ত্রিশ বছর ধরে যুদ্ধ চলছিল, তখন সুইডেনের রাজা গুস্তাভাস এডোলফাস ভাবলেন তিনি যদি বাল্টিক রাজ্য শাসন করতে চান, তবে তাকে নদীপথে ভারী অস্ত্রের সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখতে হবে। যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের নির্দেশ দিলেন। ‘ভাসা’ ছিল সেই যুদ্ধ জাহাজগুলোর একটি। দুটি বন্দুকের ডেক, ৬৪টি ব্রোঞ্জের কামান এবং ৪৫০ জন ক্রুসহ এই শক্তিশালী জাহাজ প্রস্তুত করা হয়। প্রতিটি কামান থেকে ২৫০ কেজির গোলা নিক্ষেপ করা যেত, যা ওই সময় ইউরোপিয়ান অন্য জাহাজগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ ছিল।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, বানানোর পরও জাহাজে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কারণ একটি জাহাজ যেভাবে বানানো হয়, তার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন নিয়ম মানা হয় এই যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে। জাহাজ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত যে সময় পাওয়ার কথা, সেটি দিতে প্রস্তুত ছিলেন না রাজা গুস্তাভাস। তিনি বারবার নির্ধারিত পরিকল্পনায় ব্যাঘাত করছিলেন, জাহাজের যে মাপ ছিল তা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না, এমনকি একাধিকবার বিভিন্ন পরিবর্তন করছিলেন নকশায়। এরই মধ্যে জাহাজের নির্মাণে অর্থ সংকটের কারণে কাজ অনেক দিন বন্ধ রাখতে হয়। এতসব ঝামেলা পার করতে না করতেই জাহাজ নির্মাতার মৃত্যু হয়। সব প্রস্তুতি শেষে ১৯৬১ সালের ২৪ এপ্রিল শেষ পর্যন্ত ‘ভাসা’ পানিতে নামার জন্য প্রস্তুত হয়। যেদিন ভাসা পানিতে নামে, সেদিন আকাশ ছিল একদম পরিষ্কার। মৃদু বাতাসের সঙ্গে জাহাজ পরিচালনার জন্য একদম উপযুক্ত একটি আবহাওয়া। কামান থেকে গুলি ছোটার জন্য প্রস্তুত ছিল ভাসা। মাত্র ১ হাজার ১৩০ মিটার যাওয়ার পরই জাহাজের পাল খুলে গিয়ে ভাসা বন্দরের দিকে ভয়ংকরভাবে হেলে পড়ে। প্রথমবারের ধাক্কায় ভাসা নিজেকে সামলে নিলেও পরেরবার আবার হেলে পড়লে গুলি রাখার জায়গায় পানি ঢzকে যায়। অনেক চেষ্টা করেও ভাসাকে পানিতে ভাসিয়ে রাখা যায়নি। ভূমি থেকে মাত্র ১২০ মিটার দূরে হাজার মানুষের চোখের সামনে ধীরে ধীরে ডুবে যায় ভাসা। জাহাজডzবির এ ঘটনায় রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে যান রাজা গুস্তাভাস। জাহাজের নির্মাতা আর ক্রুদের দল একে অপরকে দোষারোপ করছিলেন। তখনই রাজার নির্দেশে জাহাজের চালককে আটক করা হয়। পরে জানা যায়, আসলে জাহাজ নির্মাণেই ত্রুটি ছিল। এ কারণে কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই। জাহাজের প্রধান নির্মাতার মৃত্যু আর প্রতিটি কাজে রাজার হস্তক্ষেপের কারণে সঠিকভাবে কোনো কাজই করা হয়নি। হিসাবনিকাশ করে জানা যায়, হালকা বাতাসে ভাসা যদি আবার দাঁড়িয়েও যেত, তবু বেশি দূর পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা তার ছিল না। অতিরিক্ত ওজন আর সঠিকভাবে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভাসার এই করুণ পরিণতি হয়। যুদ্ধজাহাজ ভাসাকে এখন স্টকহোমের দুরগার্ডেন দ্বীপের ভাসা জাদুঘরে রাখা আছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877